শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার তালতলীতে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি ও সূবর্ণজয়ন্তী পালন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের করা ব্যানারে স্থানীয় সাংসদকে প্রধান অতিথি না রেখেই ইউএনও নিজেই সভাপতি হিসেবে তার নাম ব্যবহার করায় অনুষ্ঠান বর্জন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠন।
জানা যায়, গতকাল বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি ও সূবর্ণজয়ন্তী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য তালতলী উপজেলা প্রশাসন নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে প্রধান অতিথি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি উল কবির জোমাদ্দারকে বিশেষ অতিথি লেখা রয়েছে। সকালের অনুষ্ঠানে কোনো ব্যানার ব্যবহার করেনি উপজেলা প্রশাসন। তাই দিনের সকল অনুষ্ঠান শেষ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠন। কিন্তু সন্ধ্যার পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখতে পায় ব্যানারে শুধুমাত্র সভাপতি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাওসার হোসেনের নাম লেখা রয়েছে।
ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি উল কবির জোমাদ্দারের নাম থাকায় কথা থাকলেও তাদের দু’জনের নাম না থাকায় তাৎক্ষণিক ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা অনুষ্ঠান বর্জন করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
এ ছাড়া বিজয় দিবসের সকালের অনুষ্ঠানের মঞ্চে ইউএনও’র আত্মীয়- স্বজনরা ভিআইপি আসন দখল করে রাখায় আসন না পেয়ে অনুষ্ঠানস্থল থেকে ফিরে যান উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ছোটবগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মু.তৌফিকউজ্জামান তনুসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠান মঞ্চে তালতলী প্রেস ক্লাবের সভাপতি জসিম উদ্দিন ও অন্যান্য সংবাদকর্মীদের বসার জন্য রাখা হয়নি কোনো আসন।
এদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠন অনুষ্ঠান বর্জন করলেও ইউএনও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন বলে অভিযোগ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
এ বিষয়ে তালতলী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মু. আ. মোতালিব বলেন, গতকালের বিজয় দিবসের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের অবমূল্যায়ন করেন ইউএনও। আমাদের বসার জন্য কোনো ব্যবস্থা না রাখায় আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে চলে এসেছি। তিনি আরো বলেন, ব্যানারে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নাম না থাকার বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ছোটবগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মু. তৌফিকউজ্জামান তনু মুঠোফোনে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যকে প্রধান অতিথি ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিশেষ অতিথি হিসেবে তাদের নাম ব্যানারে না লিখে ইউএনও নিজে শুধু তার নাম সভাপতি হিসেবে ব্যানারে লেখায় আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিজয় দিবসের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বর্জন করেছি। অনুষ্ঠানের মঞ্চে কিছু ভিআইপি আসন নির্ধারিত রাখা হলেও সেখানে ইউএনও’র আত্মীয়-স্বজনরা দখল করে রাখায় আসন না পেয়ে চলে এসেছি।
তিনি আরো বলেন, আওয়া মীলীগ অনুষ্ঠান বর্জন করলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রেজবি উল কবির জোমাদ্দার বলেন, বিজয় দিবসের সকালের অনুষ্ঠানে ব্যানার না দেখে সকল অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় এসেছি। বিকালের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার পূর্বেই সংবাদ পাই যে ব্যানারে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে প্রধান অতিথি ও আমাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে রাখা হয়নি। তাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সকলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বর্জন করে। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানের মঞ্চে আসন না পেয়ে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাওসার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুষ্ঠান বর্জনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। প্রধান অতিথি হিসেবে সংসদ সদস্যের নাম থাকার কথা থাকলেও তিনি অনুপস্থিত থাকায় তাই ব্যানারে কোনো অতিথির নাম লেখা হয়নি। তাই সরকারের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আমার একার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এটা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান এখানে বর্জন করার কিছুই নেই।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তাই না জেনে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
Leave a Reply